শিক্ষা

তরল দুধের ৯৬ নমুনার ৯৩ টিতেই ক্ষতিকর উপাদান


তরল দুধের ৯৬টি নমুনার ৯৩টিতেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্যাকেটজাত ৩১টি ‍দুধের ১৮টিতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। এর বাইরে কিছু কিছু দুধের নমুনায় টেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৮ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এ সময় ক্ষতিকর উপাদানযুক্ত পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট নাম না থাকায় সেগুলো উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ১৫ মে পরবর্তী শুনানির জন্য দিনও নির্ধারণ করা হয়েছে।

আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। দুদকের পক্ষে আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান এক সপ্তাহের সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। বিএসটিআই’র মহাপরিচালকের পক্ষেও ওকালতনামা দাখিল করা হয়।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে বাজারের তরল ও প্যাকেটজাত তরল দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়—কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার অণুজৈবিক বিশ্লেষণ করে ৯৩টি নমুনাতেই টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে। এর একটি নমুনায় স্যালমোনেলা পাওয়া গেছে। রাসায়নিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী পাঁচটি নমুনায় সিসা, তিনটিতে আফলাটক্সিন, ১০টিতে টেট্রাসাইক্লিন, একটিতে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও ৯টিতে পেস্টিসাইড ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্যাকেটজাত তরল দুধের ৩১টি নমুনার (দেশি ২১টি ও আমদানি করা ১০টি) মধ্যে ১৭টি নমুনায় টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট, ১৪টিতে মোল্ডস এবং আমদানি করা একটি নমুনায় কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে।

রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশি প্যাকেটজাত দুধের একটি নমুনাতে আফলাটক্সিন, ছয়টিতে টেট্রাসাইক্লিং এবং আমদানি করা দুধের তিনটিতে টেট্রাসাইক্লিং রয়েছে ক্ষতিকর মাত্রায়।

কেবল দুধ নয়, দই ও পশুখাদ্যের নমুনাতেও পাওয়া গেছে ক্ষতিকর উপাদান। এর মধ্যে দইয়ের ৩৩টি নমুনার ১৭টিতে টিপিসি, ছয়টিতে কলিফরম কাউন্ট, ১৭টিতে ইস্ট/মোল্ড এবং একটিতে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ক্ষতিকর মাত্রায়।

আর পশুখাদ্যের ৩০টির মধ্যে ১৬টিতে ক্রোমিয়াম, চারটিতে আফলাটক্সিন, ২২টিতে টেট্রাসাইক্লিং, ২৬টিতে এনরোফ্লক্সাসিন, ৩০টিতে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও দুইটিতে পেস্টিসাইড (এন্ডসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া গেছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—চার সপ্তাহের (২৪ এপিল থেকে আগামী ২২ মে) মধ্যে কাঁচা তরল ও পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ, গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফল পর্যালোচনা; ২৩ মে থেকে ২২ জুনের মধ্যে পশুখাদ্যের নমুনা সংগ্রহ এবং গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটির মাধ্যমে ফল পর্যালোচনা ; ২৩ মে থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে প্রাথমিক উৎপাদন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ, ফলগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং কমিটি কর্তৃক যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন। কমিটির আহ্বায়কের সই করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নামের তালিকাও আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

এরআগে, একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘দুধ-দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক অণুজীব, কীটনাশক, সিসা, লেড, পেস্টিসাইড, গরুর দুধেও বিষের ভয়’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে তিন মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করে।

মন্তব্য