সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও জিহাদিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৩জন নিহত হয়েছে। অঞ্চলটিতে সরকারি সৈন্য ও তাদের মিত্র রাশিয়ান বাহিনী গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক বোমা হামলা চালায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, জিহাদিরাও রাশিয়ার বিমান ঘাঁটি লক্ষ করে রকেট হামলা চালিয়েছে। তবে, সেগুলো আকাশেই ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হামলায় কোনো হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে, ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সোমবার জানায়, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় হামা প্রদেশে ভয়াবহ এই লড়াইয়ে ২২ জন সরকারপন্থী যোদ্ধাও নিহত হয়েছে।
যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি আরও জানায়, সংঘর্ষে আল-কায়েদার সাবেক সিরীয় শাখা হায়াৎ তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও এর মিত্র তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির সদস্যসহ ২১ জিহাদি নিহত হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, সরকারি বাহিনী ওই অঞ্চলের দুটি গ্রাম ও একটি কৌশলগত পাহাড়চূড়ার দিকে অগ্রসর হলে এই সংঘর্ষ ঘটে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, সিরীয় সৈন্যরা উত্তরাঞ্চলীয় হামা ও পার্শ্ববর্তী ইদলিবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি ও সরবরাহ পথে অভিযান চালায়।
গত মাসে এইটিএস অধিকৃত অঞ্চলটিতে বোমা হামলা জোরদার করা হয়। এর ফলে নতুন করে স্থানীয়দের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে।
অবজারভেটরি জানায়, এর আগে সোমবার ইদলিব ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে সিরীয় সরকারি বাহিনী ও তাদের রাশিয়ান মিত্রদের গোলা বর্ষণ ও বিমান হামলায় পাঁচ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
ইদলিবে এএফপি’র এক আলোকচিত্রগ্রাহক সাম্প্রতিক হামলায় কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেছেন।
সোমবার রাতে সরকারি সৈন্য ও রুশ বাহিনীর বিমান হামলা ও গোলার আঘাতে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী, পুত্রবধূ ও দুই নাতিকে হারিয়েছেন। তিনি পরিবারের জীবিত সদস্যদের নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কোথায় যাচ্ছি।’
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেস বেসামরিক লোকদের রক্ষায় অস্ত্রবিরতি মেনে চলার জন্য যুদ্ধরত সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গুতেরেস ‘পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে অবিলম্বে পরিস্থিতির উন্নতি এবং ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পূর্ণভাবে মেনে চলার জন্য সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’
সোমবার আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক এনজিও রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সিরিয়ায় হামলার কারণে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এনজিওটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘যদি এই লোকদের রক্ষার জন্য কিছু করা না যায় তবে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরি অবস্থা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
জাতিসংঘ জানিয়েছে, স্কুল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোও হামলার তীব্রতা থেকে রেহাই পায়নি।
ইউএন অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিরাটিয়ান অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা ডেভিড সোয়ানসন বলেন, ২৮ এপ্রিল থেকে অন্তত সতিটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গোলার আঘাত লেগেছে। এগুলোর চারটি হামা ও তিনটি ইদলিবে অবস্থিত।
সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়া ও বিদ্রোহীদের সমর্থক তুরস্কের মধ্যে তুরস্ক সীমান্তবর্তী ইদলিব অঞ্চলে একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠায় চুক্তি হয়।
তবে এইচটিএস জানুয়ারি মাসে অঞ্চলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে আবার বোমা হামলা বেড়ে যায়। প্রায় ৩০ লাখ লোক ওই অঞ্চলে বাস করে। সূত্র: বাসস, এএফপি