সভ্যতার প্রয়োজনে আবির্ভাব ঘটেছিল ঢেঁকির। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রায় প্রযুক্তির উৎকর্ষে ঢেঁকি বিলুপ্ত প্রায়। ‘ঢেঁকি’ শব্দটি নতুন প্রজন্মের কাছে অতীতের গল্প মাত্র। দেশের গ্রামাঞ্চলে গেলে এখনও কিছু জায়গায় ঢেঁকির দেখা মিলবে। তবে ব্যবহার না থাকায় ঢেঁকি ঘরের পুরনো সেই জৌলস খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ ঢেকির জায়গা দখল করে নিয়েছে মেশিন।
ঢেঁকি সাধারণত শাল, বড়ই, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি শক্ত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হত। মোটা, ভারী দীর্ঘ এক কাঠের খণ্ডের আগায় তিন-চার ফুট লম্বা একটি কাঠের লম্বা টুকরো মাটিতে তৈরি করা একটি গর্তের সোজাসুজি লাগানো হত। কাঠের টুকরোর আগায় একটি লোহার বেড় পরানো অংশ থাকত। একে বলা হত ‘মুষল’। আর মাটিতে তৈরি গর্তটিকে বলে ‘গড়’। প্রবাদ আছে ‘ঢেঁকি যতই মাথা নাড়ুক গড়ে তাকে পড়তেই হবে’। মূল ঢেঁকিটিকে পাথরের বা কাঠের চাপানে বসানো হত। ঢেঁকির পিছনে এক বা একের বেশি মানুষ পায়ে চাপ দিলেই ঢেঁকি ওঠা-নামা করে। ঢেঁকির ওঠানামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক জন গড়ের মধ্যে শস্য ফেলতেন।
ঢেকির যুগে ঢেঁকিই ছিলো ধান থেকে চাল আর চাল থেকে আটা প্রস্তুতের একমাত্র মাধ্যম। যে কারণে নবান্ন এলেই ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়ত নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরির। ঢেঁকিতে তৈরি আটা দিয়ে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতো পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ নানা ধরনের বাহারি পিঠা-পুলি। পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। গ্রামীণ জনপদগুলোতে এখন বিরাজ করছে শহুরে আবেশ। তাই গ্রামে গ্রামে আর ঢেঁকি নেই, নেই পল্লিবধূদের মনমাতানো গান। কিছু জায়গায় নবান্ন উৎসব হলেও পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি।