কলাম

আমাদের অভিভাবকরা কী করলেন?


আপনাদের ‘বেদনা’ আমরা বুঝি। অনুভবে সবই ডানা মেলে। ভাবায়। তবে এ ভাবনার প্রকার অনেক। সময়ে স্বস্তি পাই। কষ্টও পাই। ধিক্কার দেই। সত্যি বলতে কি জানেন? আমাদের পেশা একই। আমরা সাংবাদিক। এমনিতেই আপনাদের পছন্দ করি। ভালোবাসি। বলতে পারেন আপনাদের অন্ধ কর্মী। ভোট দেই। নেতা হন। ক্ষমতা বাড়ে। হয়তো সম্পত্তি-অর্থও বাড়ে। আপনারা রাবণবনে বাস করেন। পরক্ষণে আমাদের ভুলে যান। ঠিক এভাবে ভুলে যান, এই তুমি অমুক না? চেনা চেনা লাগছে। তোমার নাম যেন কী? কোন হাউজে কাজ করো? তবে যারা বহুল পরিচিত তারা আলাদা।

বছর গড়িয়ে নির্বাচন আসে। আপনাদের হাঁকডাক বেড়ে যায়। ফেসবুক থেকে মোবাইল ফোন-মেসেজ; সবখানেই আপনারা সরব। সরব চায়ের দোকান। দেখা হলে চা খেতেই হবে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদেরও চিনিসুদ্ধ চা খেতে ছাড়েন না। আমরাও সরব হয়ে উঠি। আপনার জন্য লড়তে হবে। নেতা বানাতে হবে। পরে যা হয় হোক।

করুণ করোনাকাল চলছে। বিশ্বে হাজারে হাজারে মানুষ মরছে। আমাদের সোনার বাংলাও আক্রান্ত। প্রতিদিনই মৃত্যু বাড়ছে। আক্রান্ত বাড়ছে। ভালোবাসার বেহালা আজ বেসুরো। বীণার সব তার যেন ছিঁড়ে গেছে। সুর উঠছে না। সেই সুর আদৌ আর ছড়াবে? তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, এটি যেন সত্যিই সত্য না হয়। আবার যেন পৃথিবী জেগে ওঠে। সোনা রোদ্দুরে মোড়ানো প্রতিটি ভোর যেন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে। পাখিরা গায় মধুর কলতানে। আন্দোলিত করে। ফুলেরা ফুটুক। গন্ধ ছড়িয়ে দিক। মৌমাছি উড়ে উড়ে বসুক ফুলকলিতে।

দেশজুড়ে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। ঘরের বাইরে যেতে মানা। এটাই এখন করোনামুক্তির মহৌষধ। মাঠে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজারো সদস্য। আমাদের চিকিৎসকরা এক একজন মহাবীর। জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন। তাদের মমতাময়ী আন্তরিক সেবা-যত্ন আমাদের সারিয়ে তুলছে। সাহস দিচ্ছে। আমরা সুস্থ হচ্ছি। আমরা তাদের চোখে স্বপ্ন দেখছি। সরকারি চাকরিজীবীর সব ধরনের ছুটি বাতিল। যার যার জায়গা থেকে সেই সেই কাজ করছেন।

এসব ব্যক্তির মতোই জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন আরেক পেশার মানুষ। তারা সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট। গণমাধ্যমকর্মী। মিডিয়াকর্মী। হোক তিনি সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, রিপোর্টার, সম্পাদনা সহকারী, কম্পিউটার বিভাগ, মেইল পিয়ন অথবা গাড়িচালক।

যার সামর্থ্য আছে, সে টিকবে। যার নেই সে পড়ে যাবে। মাঝের ভাই-ব্রাদার-বন্ধু-বড় ভাই, নেতানেত্রী সবই সময়ের আপন। অসময়ে কেউ কারও নয়।

আসল কথায় আসা যাক। অন্য পেশার মানুষ করোনার করুণ সময়ে অন্তত সরকার-কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়েছেন। বীমার আওতায় এসেছেন। ঝুঁকিভাতার আওতায় পড়েছেন। কিন্তু আমরা? কোনো কিছুরই আওতায় পড়লাম না। কেউ আমাদের জন্য কিছু করল না। কিছু বললও না। আমরা তাকিয়ে ছিলাম প্রধানমন্ত্রীর দিকে। তিনি আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। হয়তো আগামীতে আমাদের দুঃখ বুঝবেন। কিছু একটা করবেন। তথ্যমন্ত্রীও কিছু করলেন না। তেমন কিছুই বললেন না। বলেছেন, সঠিক দায়িত্বটুকু পালন করতে।

কথা হলো- যারা আমাদের অভিভাবক-নেতা- তারা কি করলেন? দৃশ্যত তারা কিছুই করেননি। করবেন বলেও মনে হচ্ছে না। তাদের ভূমিকা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আসলে তাদের ভূমিকা নেই বললে ভুল হবে না। আমার প্রশ্ন- অন্তত চেষ্টাটুকু কি তারা করেছেন? সার্বিক সংবাদ বলে, তারা তা করেননি। তবে তারা বলতে পারেন- আমরা অনেক কিছুই করেছি। চেষ্টা করছি। সপ্তাহ দুই আগে এটি নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখেছিলেন। বলেছিলেন। এখন আর বলেন না। লেখেনও না। জানেন কোনো কাজ হবে না। মানে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

হ্যাঁ, এ দুর্যোগ আপনাদেরও ছুঁয়েছে। আপনারাও ‘লকডাউনে’। আপনারাও মানসিকভাবে আক্রান্ত। কষ্ট কোথায় জানেন? আমার-আমাদের-সহকর্মীদের মিনিমাম খবর পর্যন্ত কেউ রাখছেন বলে মনে হচ্ছে না। সচল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি পরিষ্কার। শোনেন- একটু বোঝার চেষ্টা করেন। খোঁজ-খবর নেন। দেখুন- এই ‘লকডাউনে’ কোন সহকর্মীর বাসায় চাল-ডাল তরকারি নেই। হয়তো ছোট্ট বাচ্চাটির খাবার দুধ নেই। ওষুধ নেই। কারও বাসা ভাড়া দেওয়ার অর্থ নেই।

হে আরশের মালিক, জাতির ক্রান্তিকালে তুমি সাহায্য করো। তুমি ছাড়া যে আর কেউ নেই। করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আসলে কেউ কারও নয়। যার সামর্থ্য আছে, সে টিকবে। যার নেই সে পড়ে যাবে। মাঝের ভাই-ব্রাদার-বন্ধু-বড় ভাই, নেতানেত্রী সবই সময়ের আপন। অসময়ে কেউ কারও নয়।

মন্তব্য