নোয়াখালী জেলার চাটখিল সদর উপজেলার সাতটি হাসপাতালকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রোকনুজ্জামান খান এই জরিমানা করেন।
মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘চাটখিল ইসলামিয়া হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী ৭০ হাজার, চাটখিল ফিজিও থেরাপি সেন্টারকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ৩৫ হাজার, নবজাতক শিশু চাইল্ড কেয়ার ও গাইনি হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ ও মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুযায়ী ৭৫ হাজার, জনজীবন মেডিক্যাল সার্ভিসেসকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী ৭০ হাজার, চাটখিল শিশু হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী ৮৫ হাজার, চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ ও মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ৪৫ হাজার ও ডা. জেবুন্নেছা জেনারেল হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ ও মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকাসহ সাতটি হাসপাতালকে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।
মো. রোকনুজ্জামান খান জানান, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ বিধি অনুযায়ী তফসিল ক, খ ও গ তে বর্ণিত অবকাঠামো, ৩৬ ধরনের উপকরণ, ডিউটি ডাক্তার, নার্স, জীবন রক্ষাকারী ড্রাগ, ইমার্জেন্সি সেবা, অপারেশন থিয়েটার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাসপাতাল ক্লিনিক পরিচালনার লাইসেন্সও পাওয়া যায়নি। ছিল অপরিষ্কার পরিবেশ। অপারেশন থিয়েটারগুলোর মূল বেডগুলো জং ধরা ও অর্ধ রঙবিহীন, অপারেশন থিয়েটারে যেসব ওষুধ থাকার কথা সেই ধরনের ওষুধগুলো অযাচিতভাবে সংরক্ষণ করা, অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত সিজার ও অপর যন্ত্রপাতিগুলোও ছিল জং ধরা, অপারেশনে ব্যবহৃত কাপড় ও বালিশে লেগে ছিল রক্তের দাগ ও তাজা রক্ত। অভিযানের সময় এসব হাসপাতালের কোনও ডিউটি ডাক্তার পাওয়া যায়নি। অধিক মূল্য গ্রহণ করে সেবার নিম্নমান প্রদান করা হচ্ছে। ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী প্যাথলজি ও ফার্মেসিতে আদালত পরিচালনার সময় দেখা যায়, কোনও লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া ডিগ্রিবিহীন টেকনিশিয়ান দ্বারা ল্যাবগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে এবং একইসঙ্গে এসব ল্যাবে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ব্যবহৃত হচ্ছে না। ল্যাবগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে, যা দিয়ে প্যাথলজির টেস্ট কার্যক্রম করা হচ্ছিল। এগুলো জব্দ করা হয়েছে। এসময় উপজেলার কোনও ফার্মেসিতেই ফার্মাসিস্ট পাওয়া যায়নি। ফার্মেসিগুলোতেও বিপুল পরিমাণ মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে। এক্স-রে পরীক্ষার অনুমোদনের জন্য হাসহপাতালগুলোতে পাওয়া যায়নি আনবিক শক্তি কমিশনের অনুমোদন। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও এসব প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়নি। কোনও হাসপাতাল-ক্লিনিক-প্যাথলজিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৯ ধারা অনুযায়ী সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণের বিষয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিষ্ঠানে যেসব সেবা দেওয়া হচ্ছে তার সকল সেবার নাম ও সেবার মূল্য দেওয়া নেই এবং অনেক প্রতিষ্ঠানে সেবার মূল্য তালিকাও দেখা যায়নি।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরাফাত, বিএমএ প্রতিনিধি ডা. দ্বীপন চন্দ্র মজুমদার, ড্রাগ সুপার মাসুদুজ্জামান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করে চাটখিল থানা পুলিশ।