খুনি ও অর্থ-পাচারকারীদের অবশ্যই শাস্তি হবে বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করেছি। খুনি ও অর্থ-পাচারকারীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, যত টাকাই খরচ করুক, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।’ বৃহস্পতিবার (৯ মে) লন্ডনের তাজ হোটেলে স্থানীয় সময় বিকেলে এক মত-বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত খুনি ও অর্থ-পাচারকারীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। আমরা এই রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নেবো। তারা যত স্লোগানই দিক, যত তিরস্কারই করুক, তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।’
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি অপপ্রচার করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের জন্মের কোনো বৈধতা নেই, তারাই সবকিছুতে অবৈধ খুঁজে বেড়ায়।’ তিনি বলেন, ‘মিথ্যা নিয়ে কারবার করাই বিএনপির ব্যবসা। তারা এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে এবং বিদেশে অর্থ পাচার করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছে। তবে, আমি বিশ্বাস করি, সত্যের জয় হবেই।’
বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় এবং গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বরেন, ‘যেন বিজয় সমুন্নত থাকে। অতীতের মতো বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে এবং দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করতে না পারে।’
দীর্ঘ প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সরকার নিজস্ব অর্থ দিয়েই পদ্মা নেতু নির্মাণ করছে এবং ইতোমধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সেতুর প্রায় ২ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু আমরা সেই অভিযোগ মেনে নেইনি বরং আমরা এর প্রতিবাদ করেছি কারণ সেই সাহস আমাদের ছিল। আমরা কেন তাদের অভিযোগ মেনে নেব, যে কাজ আমরা করিনি? একটি সংস্থা আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছিল এবং আমরা তা মেনে নেইনি। কেননা তা কখনো ঘটেনি। আমরা কোনো অভিযোগ ঘাড়ে করে ক্ষমতায় আসতে চাইনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কোনো মিথ্যা অভিযোগের দায় নিতে পারি না এবং আমি জানি মানুষ সত্য ভালবাসে এবং মর্যাদা দেয়, আমি এও জানি সত্যের পথ সবসময়ই কঠিন এবং সে পথেই আমি এ পর্যন্ত এসেছি।’
গত নির্বাচনে বিএনপি’র ভরাডুবির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দলটি নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ না করে মনোনয়ন বাণিজ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘তারা এক একটি আসনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। যাদের নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল তাদেরই তারা বাদ দিয়ে দেয়।’
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার একটি সময়োপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে এবং মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে।’
কওমি মাদ্রাসাগুলো একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ঝরেপড়া রোধ করতে স্কুলগুলোতে মিড ডে মিল চালু করা হয়েছে।’ সরকারের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলায় তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন করবো।’
সরকার আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ভিত্তি করেই দেশের অর্থনীতি এখন শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণ এবং প্রবাসীদের মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানান।
তিনি সবাইকে আগাম ঈদ শুভেচ্ছাও জানান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলো এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এত সভাপতিত্ব করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান।
প্রসঙ্গত, ১০-দিনের সফরে গত ১ মে লন্ডন যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী শনিবার (১১ মে) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সূত্র: বাসস