কিংবদন্তির সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। মঙ্গলবার (৭ মে) বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শিল্পীর মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় বাসস।
সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর সোমবার (৬ মে) সকালে তৃতীয় দফায় হার্ট অ্যাটাক হয় সুবীর নন্দীর। এর আগে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তার।
বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, তার মৃত্যুতে দেশের সংস্কৃতির অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। সংগীত ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তার অবদান জাতি দীর্ঘকাল স্মরণে রাখবে। রাষ্ট্রপতি তার বিদেহী আত্মার মুক্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
পৃথক এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এই কণ্ঠশিল্পী তার কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন।’ সুবীর নন্দীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
১৬ দিন রাজধানীর সিএমএইচে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন সুবীর নন্দী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে দফায় দফায় হার্ট অ্যাটাক হয় তার।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবীর নন্দী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও কন্যা। রাত ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর সিএমএইচে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাক করেন এই নন্দিত শিল্পী। এরপর তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী।
৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে। ছবির নাম ‘সূর্যগ্রহণ’।
সুবীর নন্দী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চারবার। সংগীতে অবদানের জন্য এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পান তিনি। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- আমার এ দুটি চোখ, বন্ধু হতে চেয়ে, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, চাঁদের কলঙ্ক আছে, দিন যায় কথা থাকে, একটা ছিল সোনার কন্যা, হাজার মনের কাছে, কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, পাহাড়ের কান্না, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার প্রভৃতি।